ফাতিহা পাঠ করা একটি ইসলামী রীতি যেখানে কুরআনের কিছু আয়াত পাঠ করা হয় যাতে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও পুরস্কার প্রেরণ করা যায়। এটি সঠিকভাবে করা জরুরি যাতে ইবাদতটি গ্রহণযোগ্য হয় এবং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়। নিচে ফাতিহা পাঠের বিস্তারিত পদ্ধতি দেওয়া হল:

১. নিয়্যাত (নিয়াহ):
ফাতিহা পাঠ করার আগে নিয়্যাত করা প্রয়োজন। অন্তরে আল্লাহর رضا ও মৃত ব্যক্তির জন্য পুরস্কার প্রেরণ করার নিয়্যাত করুন। নিয়্যাতটি এইরকম হতে পারে:

"হে আল্লাহ! আমি এই ফাতিহা পাঠ করছি যাতে এর পুরস্কার (মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করুন)-এর দিকে পাঠানো হয়। অনুগ্রহ করে একে গ্রহণ করুন।"

২. স্থান এবং পরিস্কারতা:
• ফাতিহা একটি পরিস্কার ও পবিত্র স্থানে বসে পাঠ করা উচিত।

• পরিস্কার পোশাক পরিধান করুন এবং অজু (ওযু) করুন।

• যদি সম্ভব হয়, ফাতিহা একটি মাজার বা কবরস্থানে পাঠ করা যেতে পারে, তবে এটি বাড়িতেও পাঠ করা গ্রহণযোগ্য।

৩. সামগ্রী (প্রয়োজনীয় বস্তু):
খাবার বা পানীয় প্রস্তুত করুন। সাধারণত, ফল, মিষ্টি, পানি বা শরবত ফাতিহার জন্য ব্যবহার হয়। খাবারটি পরিস্কার ও পবিত্র রাখুন এবং ফাতিহা পাঠের সময় এটি সামনে রাখুন।

৪. কুরআন পাঠ (পাঠ করার আয়াতসমূহ):
ফাতিহাতে সাধারণত নিম্নলিখিত আয়াতগুলি পাঠ করা হয়:

১. সুরা ফাতিহা: পুরো সুরা ফাতিহা পাঠ করুন।

সুরা ফাতিহা:

বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল 'আলামীন
আর-রাহমানির-রাহিম
মালিকি ইয়াওমিদ-দীন
ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন
ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম
সিরাতাল-লাজিনা আন'মতা 'আলাইহিম
গইরিল-মাঘদূবী 'আলাইহিম ওয়ালাদ-দাল্লীন (আমিন)

২. সুরা ইখলাস: সুরা ইখলাস তিন বার পাঠ করুন।

সুরা ইখলাস:

বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম
কুল হুয়াল্লাহু আহাদ
আল্লাহু সামাদ
লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ
ওয়ালাম ইয়াকুন লাহু কুফুয়ান আহাদ

৩. সুরা ফালাক ও সুরা নাস: সুরা ফালাক ও সুরা নাস একবার করে পাঠ করুন।

সুরা ফালাক:

বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম
কুল আ'উযু বিল্লাহি রব্বিল ফালাক
মিন শাররি মা খালাক
ওয়া মিন শাররি গাসিকিন ইযা ওয়াকাব
ওয়া মিন শাররি নাফফাথাতি ফিল উকাদ
ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ

সুরা নাস:

বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম
কুল আ'উযু বিল্লাহি রব্বিন-নাস
মালিকিন-নাস
ইলাহিন-নাস
মিন শাররি ওয়াসওয়াসিল খান্নাস
আল্লাযী ইউওয়াসওয়িসু ফী সুদূরিন-নাস
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান-নাস

৪. দরুদ শরীফ: নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর তিন বার দরুদ শরীফ পাঠ করুন।

দরুদ-ইব্রাহিম (সর্বাধিক প্রচলিত):

আল্লাহুম্মা সল্লি 'আলা মুহাম্মাদিন ওয়া 'আলা আলি মুহাম্মাদ
কামা সাল্লাইতা 'আলা ইবরাহীমা ওয়া 'আলা আলি ইবরাহীমা
ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ
আল্লাহুম্মা বারিক 'আলা মুহাম্মাদিন ওয়া 'আলা আলি মুহাম্মাদ
কামা বারাক্তা 'আলা ইবরাহীমা ওয়া 'আলা আলি ইবরাহীমা
ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ

৫. দোয়া করা:
পাঠ করার পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আপনার গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশের প্রার্থনা করুন। দোয়া হতে পারে:

"হে আল্লাহ! এই ফাতিহার পুরস্কার (মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করুন)-এর দিকে পাঠান। তাদের ক্ষমা করুন, তাদের জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান দিন এবং তাদের কবরকে উজ্জ্বল ও সহজ করুন। আমিন।"

৬. খাবারের উপর ফাতিহা পাঠ করা:
• খাবারের উপর হাত রাখুন অথবা তা আপনার সামনে রাখুন।

• ফাতিহা পাঠের সময় কুরআনিক আয়াতগুলোর পুরস্কার খাবার বা শরবতের দিকে পাঠান।

• তারপর এটি মানুষদের মধ্যে বিতরণ করুন। এটি শুধুমাত্র দুঃস্থদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা প্রয়োজন নয়; এটি পরিবার বা বন্ধুদের সাথে ভাগ করা যেতে পারে।

৭. মনে রাখার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
• ফাতিহাতে রিয়া (প্রদর্শনী) থেকে বিরত থাকুন। এটি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করুন।

• ফাতিহা পাঠের সময় আপনার হৃদয় ও মন আল্লাহর স্মরণে নিবদ্ধ রাখুন।

• হারাম (নিষিদ্ধ) কিছু ব্যবহার করবেন না, যেমন মদ বা অপবিত্র বস্তু।

ফাতিহার গুরুত্ব:
• ফাতিহার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মৃত ব্যক্তির জন্য পুরস্কার প্রেরণ করা এবং তাদের জন্য আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করা।

• এটি আমাদের ও মৃত ব্যক্তির মধ্যে পুরস্কারের একটি সেতু হিসেবে কাজ করে এবং আল্লাহর দয়া ও বরকত লাভের একটি মাধ্যম।

উপসংহার:
ফাতিহা পাঠের এই পদ্ধতি ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী সঠিক এবং সহজ। একে আন্তরিকতা ও নিয়তের বিশুদ্ধতা সহকারে পালন করুন। আল্লাহ আপনার ইবাদত গ্রহণ করুন এবং আপনার মৃত প্রিয়জনদের জান্নাতে উচ্চ স্থান দান করুন।

আমিন।