ইসলামে, জুম্মা (শুক্রবার) একটি বিশেষ এবং আশীর্বাদিত দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। হাদীসে উল্লেখিত, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"যে দিন সূর্য উঠেছে, তা হলো শুক্রবার। এই দিনেই আদম (আলাইহি সালাম) সৃষ্টি হয়েছিলেন এবং এই দিনেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন।" (সাহীহ মুসলিম: 854)
জুম্মার নামাজ একে অপরের জন্য একটি ফরজ (অবশ্য কর্তব্য), যেমনটি কুরআনে বলা হয়েছে:
"যখন শুক্রবারের নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে দ্রুত পৌঁছাও।" (সুরা আল-জুমু'আ: 62:9)
জুম্মায় একটি বিশেষ মুহূর্ত থাকে যখন দোয়া গ্রহণ করা হয়। হাদীসে বলা হয়েছে:
"এই দিনে, এমন একটি মুহূর্ত আছে যখন কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে যেকোনো হালাল বস্তু চাইলেই তার দোয়া কবুল হবে।" (সাহীহ বুখারি: 935)
এছাড়াও, সুরা আল-কাহফ পাঠ, গোসল (ঘুসল) করা এবং এই দিনটিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সন্নাহ অভ্যাস। এই দিনটি আল্লাহর উপাসনা, ভালো কাজ এবং দান-খয়রাতের জন্য উৎসর্গিত, যা আল্লাহর রহমত এবং আশীর্বাদ লাভের জন্য একটি বড় সুযোগ প্রদান করে।
জুম্মায় কী করা উচিত?
জুম্মা (শুক্রবার) ইসলামিক ধর্মে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আশীর্বাদিত দিন। এই দিনটির ফজিলত লাভ করার জন্য নির্দিষ্ট সন্নাহ এবং শিষ্টাচার পালন করা উচিত।
ঘুসল করা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
জুম্মার দিনে গোসল (ঘুসল) করা, পরিষ্কার পোশাক পরা এবং আতর ব্যবহার করা সন্নাহ। এটি আল্লাহর প্রতি সম্মান এবং ইবাদতের প্রস্তুতি প্রকাশ করে।
সুরা আল-কাহফ পাঠ:
এই দিনে সুরা আল-কাহফ পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জুম্মার দিনে সুরা আল-কাহফ পড়ে, সে আগামী জুম্মা পর্যন্ত نور (আলোক) লাভ করবে।
জুম্মার নামাজ পড়া:
জুম্মার নামাজ প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ এবং পুরুষ মুসলিমের জন্য ফরজ। এটি মসজিদে জামায়াতে পড়তে হবে, এবং তা শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন অসুস্থতা বা সফরের সময় মিস করা যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
"হে মুমিনরা! যখন শুক্রবার নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে দ্রুত চলে যাও এবং ব্যবসা ত্যাগ করো। এটি তোমাদের জন্য অনেক ভালো, যদি তোমরা জানতে।" (সুরা আল-জুমু'আ: 62:9)
দোয়া এবং ইবাদত:
জুম্মার দিনে একটি বিশেষ সময় থাকে যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দোয়া কবুল করেন। এই সময়ে, আল্লাহর কাছে sincere দোয়া কোনো বাধা ছাড়াই কবুল হয় (সাহীহ মুসলিম)। এই দিনে, একজন মুসলিমকে তার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে, আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে এবং তার চাওয়া নিয়ে আন্তরিক দোয়া করতে হবে। এটি নিজেকে উন্নত করার, সমস্যা সমাধানের এবং পরিবার ও সমাজের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করার একটি সুযোগ। এই সুযোগটি হাতছাড়া করবেন না, আল্লাহর কাছে কাছে যাওয়ার এবং আপনার ভাগ্য উন্নত করার।
দুরুদ শরিফ পাঠ:
নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দুরুদ শরিফ পাঠ করা জুম্মায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরস্কৃত। হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি নবীর উপর একবার দুরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপর দশটি দুরুদ পাঠ করেন (সাহীহ মুসলিম)। এই দিনে, একজন মুসলিমকে abundantly দুরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে, কারণ এটি আমাদের হৃদয়ে আল্লাহ এবং তাঁর নবীকে ভালবাসা এবং সম্মান বৃদ্ধি করে এবং আমাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এটি জুম্মায় আল্লাহর আশীর্বাদ লাভের একটি চমৎকার উপায়।
দান এবং ভালো কাজ:
জুম্মার দিনে দান করা এবং প্রয়োজনীয় মানুষের সাহায্য করা একটি অত্যন্ত পুরস্কৃত কাজ। এই দিনে দেওয়া দান আল্লাহর আশীর্বাদ এবং রহমত বৃদ্ধি করে। দান করা শুধু পাপের expiation হিসেবে কাজ করে না, বরং এটি হৃদয়ে শান্তি এবং ভালোলাগা নিয়ে আসে।
"যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দান করবে, আল্লাহ তা তার জন্য দশগুণ ফিরিয়ে দিবেন।"
(সাহীহ বুখারি)
"জুম্মার দিনে যা এড়ানো উচিত"
বাজার এবং ব্যবসা করা:
জুম্মার দিনে নামাজের আহ্বান জানানো হলে ব্যবসা বা কেনাকাটা করা নিষিদ্ধ। কুরআনে বলা হয়েছে, যখন নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন ব্যবসা ত্যাগ করে আল্লাহর স্মরণে চলে যাওয়া উচিত।
"যখন শুক্রবার নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে দ্রুত চলে যাও এবং ব্যবসা ত্যাগ করো। এটি তোমাদের জন্য অনেক ভালো, যদি তোমরা জানো।"
(সুরা আল-জুমু'আ: 62:9)
ঝগড়া এবং বিতর্ক:
জুম্মার দিনে ঝগড়া এবং বিতর্ক এড়ানো উচিত। এই দিনটি শান্তি, রহমত, এবং ইবাদতের জন্য নির্ধারিত। কোন ধরনের নেতিবাচকতা এই দিনের বরকত কমিয়ে দিতে পারে।
খুতবা (সারমুন) চলাকালীন কথা বলা:
খুতবা (সারমুন) চলাকালীন কথা বলা বা অন্যদের বিরক্ত করা নিষিদ্ধ। খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং তার ওপর চিন্তা করা সুন্নাহ।
আলস্য এবং নিস্ক্রিয়তা:
জুম্মার দিনে আলস্য এবং নিস্ক্রিয়তা পরিহার করা উচিত। এই দিনটি ইবাদত এবং তওবা করার জন্য, তাই এটি সক্রিয়ভাবে এবং কোনো নেতিবাচকতা ছাড়াই কাটানো উচিত।
অন্যদের অধিকার লঙ্ঘন করা:
জুম্মার দিনে অন্যদের অধিকার লঙ্ঘন করা উচিত নয়। এই দিনটি সম্পর্ক উন্নত করার এবং অন্যদের সাথে ভালো আচরণ করার জন্য ব্যবহার করা উচিত।
"একজন মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার ভাষা এবং হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।"
(সহীহ বুখারি)